বোশেখ

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল ২০২৫) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | | NCTB BOOK
11
11

যে বাতাসে বুনোহাঁসের ঝাঁক ভেঙে যায়

জেটের পাখা দুমড়ে শেষে আছাড় মারে

নদীর পানি শূন্যে তুলে দেয় ছড়িয়ে

নুইয়ে দেয় টেলিগ্রাফের থামগুলোকে।

 

সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি

তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহাপ্রতাপশালী,

গরিব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ?

কী সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে?

 

বেগুন পাতার বাসা ছিঁড়ে টুনটুনিদের

উল্টে ফেলে দুঃখী মায়ের ভাতের হাঁড়ি

হে দেবতা, বলো তোমার কী আনন্দ,

কী মজা পাও বাবুই পাখির ঘর উড়িয়ে?

 

রামায়ণে পড়েছি যার কীর্তিগাথা

সেই মহাবীর হনুমানের পিতা তুমি ?

কালিদাসের মেঘদূতে যার কথা আছে

তুমিই নাকি সেই দয়ালু মেঘের সাথী ?

 

তবে এমন নিঠুর কেন হলে বাতাস

উড়িয়ে নিলে গরিব চাষির ঘরের খুঁটি

কিন্তু যারা লোক ঠকিয়ে প্রাসাদ গড়ে

তাদের কোনো ইট খসাতে পারলে নাতো। 

 

হায়রে কতো সুবিচারের গল্প শুনি,

তুমিই নাকি বাহন রাজা সোলেমানের

যার তলোয়ার অত্যাচারীর কাটতো মাথা

অহমিকার অট্টালিকা গুঁড়িয়ে দিতো।

 

কবিদের এক মহান রাজা রবীন্দ্রনাথ

তোমার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন করজোড়ে

যা পুরানো শুষ্ক মরা, অদরকারি

কালবোশেখের একটি ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে।

 

ধ্বংস যদি করবে তবে, শোনো তুফান

ধ্বংস করো বিভেদকারী পরগাছাদের

পরের শ্রমে গড়ছে যারা মস্ত দালান

বাড়তি তাদের বাহাদুরি গুঁড়িয়ে ফেলো।
 

Content added || updated By

কবি পরিচিতি

5
5

আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করেন এবং পরিচালকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন । মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি ‘দৈনিক গণকণ্ঠ' পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তাঁর কবিতায় লোকজ শব্দের সুনিপুণ প্রয়োগ যেমন লক্ষণীয় তেমনি রয়েছে ঐতিহ্যপ্রীতি। তাঁর প্রকাশিত কাব্য : লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া ইত্যাদি। কথাসাহিত্য : পানকৌড়ির রক্ত, পাখির কাছে ফুলের কাছে তাঁর শিশুতোষ কবিতার বই। কবি ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন ।
 

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

2
2

বুনোহাঁস - যে হাঁস গৃহপালিত নয়, বনে থাকে। জেট— দ্রুতগতিসম্পন্ন উড়োজাহাজ। টেলিগ্রাফ- সংকেতের সাহায্যে দূরে বক্তব্য প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। ১৮৩৭ সালে আধুনিক এই যন্ত্র বিদ্যুতের সাহায্যে পরিচালিত হয়। (এখন এ ধরনের যন্ত্র আর ব্যবহার হয় না।)। তিষ্ঠ— স্থির হও। রামায়ণ— পৃথিবীর চারটি জাত মহাকাব্যের একটি। রচয়িতা- বাল্মীকি। মহাবীর হনুমান— রামায়ণে বীর হনুমানের বীরত্বপূর্ণ বহু কর্মের কথা উল্লেখ আছে। রামায়ণোক্ত হনুমানকে মহাবীর হনুমান বলা হয়। কালিদাসের মেঘদূত- সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন কালিদাস। সংস্কৃত ভাষায় তাঁর অমর রচনা মেঘদূতম্ কাব্য। মেঘদূতকে বাংলায় মেঘদূত বলা হয়। রাজা সোলেমান— ডেভিডের পুত্র এবং ইসরাইলের তৃতীয় রাজা। তিনি বীর ও দক্ষ যোদ্ধা ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ— বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। অদরকারি- যার প্রয়োজন নেই ।
 

Content added || updated By

পাঠ পরিচিতি

4
4

কবি আল মাহমুদের কবিতা সমগ্রের পাখির কাছে ফুলের কাছে কাব্য থেকে ‘বোশেখ’ কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি পরাক্রমশালী মাস বৈশাখ । ঋতু পরিক্রমায় বার বার সে রুদ্র সংহারক রূপে আবির্ভূত হয়। বৈশাখের নিষ্ঠুর করাল গ্রাসে এবং আগ্রাসী থাবায় কখনও কখনও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এক-একটা জনপদ । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর শিকার হয় দুঃখী দরিদ্র মানুষ বা অসহায় কোন প্রাণী। ছিঁড়ে যায় গরিব মাঝির পালের দড়ি, উড়ে যায় দরিদ্র চাষির ঘর। ছোট্ট টুনটুনির বাসাও রেহাই পায় না। কিন্তু ধনীর প্রাসাদের কোন ক্ষতি হয় না। কবি তাই আক্ষেপ করে বলছেন, প্রকৃতির যত নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা কেন তা শুধু এই গরিবের বিরুদ্ধেই ঘটবে? অবশেষে বৈশাখের কাছে তার আহ্বান, ধ্বংস যদি করতেই হয়, তাহলে গুঁড়িয়ে দাও সেইসব অট্টালিকা যা গড়ে উঠেছে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে শোষণ করে। এই কবিতায় বৈশাখের বিধ্বংসী প্রতীকের মধ্য দিয়ে অত্যাচারীর অবসান কামনা করছেন কবি ।

Content added By
Promotion